গুজব, ভুয়া সংবাদ এবং অপরাধ রিপোর্টিং

আবুল খায়ের

অপরাধ সাংবাদিকতা করছি ৩৭ বছর। সময়ের সঙ্গে অপরাধের ধরন পালটেছে। পাশাপাশি অপরাধ সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জও বেড়েছে। ডিজিটাল দুনিয়ার অপরাধ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিনিয়ত সহায়তা করছেন সাংবাদিকরা। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আগামী দিনের বাংলাদেশের বড়ো চ্যালেঞ্জ গুজব ও ভুয়া সংবাদ। এসব কারণে অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকদের দায়িত্ব আরও বেড়েছে। আমি মনে করি, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে নিজেদের প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন হওয়ার বিকল্প নেই।

কোন ঘটনা গুজব আর কোনটি গুজব নয়, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় গুজব উসকে দিতে দেখা যায় সাংবাদিকদের। কেউ কেউ হয়তো না বুঝেই গুজবের ফাঁদে পা দেন। কোন কোন সাংবাদিককে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ফেক নিউজ অথবা ভুয়া সংবাদ নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন। সঠিক সংবাদ বেছে নিয়ে প্রকাশ করাই এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ।

গুজবে গণপিটুনি

চলতি বছর বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ওই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এছাড়া পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষও গুজবের বিরুদ্ধে একটি নোটিশ দেয়। তবুও ঘটে গেছে ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনা।
দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে মানুষকে। একটি হলো ঢাকার বাড্ডায় এক নারী তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান। সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। নারায়ণগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বাকপ্রতিবন্ধী এক ব্যক্তির।

পুলিশ বলছে, ফেসবুকে কিছু গ্রুপ আছে, যেগুলো দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব গ্রুপে অনেক লাইক দেওয়া আছে। যারা খুবই অ্যামেচার ইউজার, তারা ওখান থেকে এসব শেয়ার দিচ্ছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ।

যেভাবে গুজব ছড়ায়

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বড়ো ম্যাচাকারের একাধিক ঘটনা রয়েছে। অবশ্যই এটি আমাদের জন্য সুখকর নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুজব ছড়ানোর জন্য খুবই বিপজ্জনক জায়গা। কারণ, এখানে তিন ধরনের ব্যবহারকারী থাকে। একদল গুজব ছড়ায়, আরেকটি গ্রুপ এসব পোস্ট ছড়ালেও একটি সময় পর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আরেকটি গ্রুপ এগুলো দেখে কিন্তু কিছু করে না। প্রথম দুটি গ্রুপই বেশি বিপজ্জনক।

ফেসবুকের কিছু পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগে ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লিতে হামলা হয়েছিল। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনাটি গড়িয়েছিল সাম্প্রদায়িক হামলা, পুলিশের গুলি ও একজনের মৃত্যু।

লবণ সংকটের গুজব

নভেম্বরে বাংলাদেশে লবণ সংকটের কথা বলে গুজব ছড়ানো হয়। এই গুজবকে পুঁজি করে অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। স্বার্থান্বেষী মহলটি লবণের সংকট রয়েছে মর্মে গুজব ছড়িয়ে এর দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালায়। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবাইকে আহ্বান জানায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে সাড়ে ছয় লাখ টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ আছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণচাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন লবণ মজুদ রয়েছে। এর বাইরে সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে বলে জানানো হয়।

ফেক নিউজ বা ভুয়া সংবাদ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্যাণে ‘ফেক নিউজ’ শব্দটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে শব্দটির ব্যবহার অতি পুরোনো। আমরা যাকে গুজব বলি, তা ফেক নিউজ ছাড়া আর কিছু নয়। ফেক নিউজ কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? ২০১৭ সালের নভেম্বরে রংপুরের সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নাকি ফেসবুকে মহানবী (সা.)-এর অবমাননা করেছেÑ এই গুজবের ভিত্তিতে ৩০টি হিন্দুবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, নিহত হয় একজন। পরে জানা গেল, পুরো ঘটনাই মিথ্যা। ২০১২ সালেও পবিত্র কোরআনের অবমাননা করা হয়েছেÑ এমন গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এখন ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতগতিতে। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের কারণে যে কেউ যে কোনো সময় মিথ্যা খবর ছড়াতে পারছে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিথ্যা রটনার নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছে কোনো কোনো দেশের সরকার ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাও। আমেরিকার নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনা সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত উদাহরণ।

ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বা রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিÑ যে কারণেই ছড়ানো হোক না কেন, ফেক নিউজ বা গুজব ক্ষতিকর। এসব ছড়ানো অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ আমরা কীভাবে ঠেকাব? ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দলের জন্য যা ক্ষতিকর, আমরা তা ঠেকানোর কাজ ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে করে থাকি। যেমনÑ আমরা চোর-ডাকাত ঠেকাই। ফেক নিউজ ঠেকাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা নিজেরাও যার যার মতো এই প্রহরার কাজে নামতে পারি। ফেক নিউজ নজরে এলে তা ‘শেয়ার’ করার বদলে তাকে ফেক বলে যদি চিহ্নিত করি, তাহলে মিথ্যার আগুন ছড়ানোর বদলে তা থামানো সম্ভব হবে। সবচেয়ে বড়ো কথা, কী পড়বেন, কী শেয়ার করবেন, তা ঠিক তো আপনিই করছেন। শুধু এই কাজটি যদি একটু দায়িত্বের সঙ্গে করেন, তাহলে বিপদ এমনিতেই কমে আসবে।

ফেক নিউজ চেনা

মোবাইল ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এখন নতুন শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি। যে কোনো আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বস্তুনিষ্ঠ খবরের মাঝে দু-একটা ভুয়া খবর ভাইরাল হওয়া এখন আর নতুন কিছু নয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে সরকার এরই মধ্যে ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’ গঠন করলেও ভুয়া খবর ঠেকাতে শুধু আইনের কড়াকড়ি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে তারা সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণের ওপর জোর দেন।

ভুয়া খবর শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ফ্যাক্ট চেক বা খবরের সত্যতা যাচাইয়ের গুরুত্ব উপলব্ধ করা জরুরি। এখন মানুষের চেহারা, কণ্ঠ- সবই বদলে দেওয়ার মতো প্রযুক্তি এসেছে। এতে মিথ্যা থেকে সত্যটা আলাদা করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা আরও বলিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি নাগরিককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এ অবস্থায় খবরের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিবর্তে মূলধারার বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া জরুরি। সামাজিক মাধ্যমে কোনো খবর পাওয়ার পর সেটির নিচে মন্তব্য বা শেয়ার করার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।
মূলত চারটি উপায়ে এই ভুয়া খবর ছড়িয়ে থাকে। ফেসবুক, ইউটিউব, ভুয়া ওয়েবসাইট এবং গণমাধ্যম। আর এসব মাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া খবরগুলো ইউজারদের লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়। আবার কিছু গণমাধ্যম এসব সামাজিক মাধ্যমের তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই খবর প্রকাশ করে।

পাঁচটি উপায়ে ভুয়া খবর শনাক্ত করা সম্ভব-
১. কমনসেন্স ব্যবহার করুন
২. খবরের কনটেন্ট বা তথ্য নিয়ে সন্দেহ হলে প্রতিটি যাচাই করুন
৩. অনলাইনে সার্চ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারেন
৪. খবরের তথ্যসূত্র বা ছবি-ভিডিওর উৎস বের করুন
৫. খবরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।

বাংলাদেশে অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা

আগেই বলেছি, অপরাধ বিটের সাংবাদিকরা এখন বড়ো চ্যালেঞ্জের মুখে। তাই এমন অবস্থায় অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকদের স্পটে যাওয়া, ক্রস চেক করা খুবই দরকার। তবে হতাশার কথা, অনেক সাংবাদিকই স্পটে যান না। অনলাইন পোর্টাল থেকে অথবা অন্য পত্রিকার সহকর্মীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নিউজ করেন। এই প্রবণতার কারণে ডিজিটাল দুনিয়ার তালে তালে মূলধারার গণমাধ্যমেও ভুয়া খবর প্রকাশিত হয়ে যায়। আর এটির পুরো দায় সাংবাদিকদের নিতে হবে।

অপরাধ বিটটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ, এই বিটের সাংবাদিকদের সব সময়ই অপরাধ সংক্রান্ত খবর সংগ্রহের পেছনে থাকতে হয়। অনেক সময় বড়ো বড়ো ক্রাইম বা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের অপারেশনেও যুক্ত হতে হয়। খবর সংগ্রহের জন্য দিনরাত লেগে থাকতে হয়। একই সঙ্গে নিজের অফিসকে সব সময় হালনাগাদ তথ্যাদি জানাতে হয়।

অনেক জুনিয়র সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চায়, কেমন হবে আগামী দিনের অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা? আমি বলি, দুনিয়া বদলের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে রাজনীতি, অর্থনীতি আর মানুষের স্বাভাবিক যাপিত জীবন। বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তা, রুচি আর দীর্ঘদিনের চলমান অভ্যাস। এই পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যাছে অপরাধ সংক্রান্ত সাংবাদিকতার সনাতনী ধারাও। পরিবেশ-প্রতিবেশে ঘটছে অন্য রকম এক রূপান্তর। একজন অভিজ্ঞ অপরাধ সাংবাদিক এই রূপান্তরকে শুধু দেখেই শেষ করেন না, সেগুলোকে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণেও রাখেন। একজন অপরাধ সাংবাদিককে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ভালো লিখতে জানতে হবে। ভালো বলার দক্ষতা থাকতে হবে। আর প্রযুক্তি জ্ঞান তো অবশ্যই থাকতে হবে। বিশেষ করে সর্বশেষ প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলে টিকে থাকার সুযোগ নেই।

কেস স্টাডি- এক

আমরা কী খাচ্ছি : ২০০৫ সালে ইত্তেফাকে আমি একটি সিরিজ শুরু করেছিলাম। সেটির নাম ছিল ‘আমরা কী খাচ্ছি’। ঢাকা শহরে মানুষ কী খায়, ওই সিরিজে সেটা উঠে এসেছিল। কাঁচা সবজিতেও যে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়, হোটেলে রাতের আঁধারে চলে যাচ্ছে মরা মুরগি, খাবারে রং মেশানোÑ এমন বহু বিষয় উঠে আসে প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌল্লার নেতৃত্বে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত শুরু করে। ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে ওই সময় এই অভিযান আলোড়ন সৃষ্টি করে। একটি সিরিজ রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং অভিযানে রাজধানীতে খাবারে ব্যাপক একটা পরিবর্তনও এসেছিল।

কেস স্টাডি- দুই

লাশের পেটে হেরোইন : এরশাদের আমলের শেষদিকে গুলিস্তানে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের ফল ব্যবসায়ী আবদুস সালাম পাকিস্তান গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সিদ্দিকবাজারের বাসিন্দা। পকিস্তানে গিয়ে তিনি মারা যান। তার লাশ দেশে আসার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়, তার পেটে সাড়ে তিন কোটি টাকার হেরোইন রয়েছে। পাকিস্তানের মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারের জন্য তাকে হত্যা করে লাশের পেটে হেরোইন ঢুকিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়। তবে ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, তার পেটে কোনো হেরোইন ছিল না। বাংলাদেশে আর কোনো পত্রিকায় এভাবে রিপোর্ট ছাপা হয়নি। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সালামের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। প্রফেসর ডা. মজিবুর রহমান (বেঁচে নেই) ময়নাতদন্ত করেন। রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, লাশের পেটে কোনো হেরোইন বা কোনো ধরনের মাদক ছিল না। ময়নাতদন্তে এমন চিত্র উঠে আসার পর ইত্তেফাকের রিপোর্টই সত্য প্রমাণিত হয়। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়া ঘটনাটি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।

কেস স্টাডি- তিন

মনিরের ফাঁসি : ইত্তেফাকের একসময়ের চিফ রিপোর্টার শহীদ নিজাম উদ্দিনের মেয়ে শারমিন রিমা। ১৯৯৪ সালের শেষদিকে তার লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিতে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে পড়ে ছিল। আমি রিমার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তার মেয়েজামাই মনিরের সঙ্গে চট্টগ্রাম গিয়েছিল। এরপর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রিমা কী ধরনের শাড়ি পরে গিয়েছিল, সেটার সূত্র ধরেই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আমিও নারায়ণগঞ্জ মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করি। রিমার স্বামী মনির স্ত্রীকে হত্যার কথা অস্বীকার করে। অনুসন্ধান করে আমি বের করি মনিরের সঙ্গে খুকুমণি নামে একটি মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। সূত্রাপুর থানার সামনে বদর হোটেলে আত্মগোপনে ছিলেন মনির। আমাদের তথ্যেই পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু সে হত্যার কথা অস্বীকার করতে থাকে। ইত্তেফাকে একের পর এক রিপোর্টে উঠে আসে এই হত্যার তথ্য। তখন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে নিম্ন আদালত মনির ও খুকুমণিকে ফাঁসির আদেশ দেন। যদিও উচ্চ আদালতে মনিরের ফাঁসি বহাল থাকলেও খুকুমণি খালাস পান।

লেখক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও সিটি এডিটর, দৈনিক ইত্তেফাক

শেয়ার করুনঃ

এখানেই থেমে যাওয়া নয়

আরও যা পড়তে পারেন

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভির চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে দুই দশক ধরে গণমাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা

জনগণের কাছে সমাজের নানা ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যম ‘ওয়াচডগের’ ভূমিকা পালন করে। মানুষের জানার অধিকার বা আগ্রহ থেকে

ক্রীড়া সাংবাদিকতার সেকাল-একাল

দ্দূর জানা যায় বা গুগল-উইকিপিডিয়া ঘেঁটে দেখা যায়, ছাপার অক্ষরে প্রথম দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় সতেরো শতকের শেষদিকে।

সাংবাদিকতায়
হাতে-খড়ি হোক
পিআইবির সাথে

সাংবাদিকতা বিষয়ে ই-লার্নি  কোর্স করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন। বিস্তারিত জানতে ই-মেইল করুন support@pibelearning.gov.bd ঠিকানায়