ক্রীড়া সাংবাদিকতার সেকাল-একাল

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ

যদ্দূর জানা যায় বা গুগলউইকিপিডিয়া ঘেঁটে দেখা যায়, ছাপার অক্ষরে প্রথম দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় সতেরো শতকের শেষদিকে। তবে সেটাও ভারতবর্ষে নয়, ব্রিটেনে। যদিও তখন সে পত্রিকায় কোনো স্পোর্টস রিপোর্টার ছিল না। তখন বলছি এজন্য, এর অনেক বছর পর এ পদটি সৃষ্টি হয়। ইংরেজরা ভারতবর্ষ শাসন করার সুবাদে দৈনিক পত্রিকার পরিধি ব্রিটেন ছাড়িয়ে সারা পৃথিবী তথা এ উপমহাদেশেও চলে আসে। তবে প্রথমদিকে সেটা ছিল দিল্লি, আগ্রা, মুম্বাই, কলকাতাকেন্দ্রিক। ১৯৪৭’র ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানেও অনেক নতুন দৈনিক পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৩৬ সালের ৩১ অক্টোবর মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর সম্পাদনায় কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ‘দৈনিক আজাদ’ পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। এ সময় আজাদের সম্পাদক ছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ আবুল কালাম সামুদ্দিন। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ এবং রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও পত্রিকাটির প্রকাশক ইয়ার মোহাম্মদ খানের যৌথ মালিকানায় ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’, যার সম্পাদক ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। ইত্তেফাক প্রথমে সাপ্তাহিক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরে তা দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।


প্রথমদিকে এসব দৈনিক পত্রিকায় আলাদা কোনো খেলার পাতা বা ফুলটাইম কোনো স্পোর্টস রিপোর্টার বা স্পোর্টস এডিটর ছিল না। তবে বাংলাদেশের ক্রীড়ানুরাগী পাঠকের খেলার খবরের প্রতি আতি আগ্রহের কারণে একসময় পত্রিকা মালিকরা ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টার নিয়োগ দিতে বাধ্য হন। একসময় যেখানে পুরো এক কলামও খেলার নিউজ ছাপা হতো না, পাঠকপ্রিয়তার কারণে আজ সেখানে প্রতিদিন এক-দুই এমন কী চার পৃষ্ঠাও খেলার খবর ছাপা হচ্ছে। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ফিচার পেজ তো আছেই। ক্রীড়া সাংবাদিকতার সেসব সাতকাহন নিয়েই আজকের আলোচনা।


অনেকদিন আগে, বোধকরি নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ক্রীড়াজগতে সে সময়ের প্রথিতযশা ক্রীড়া সাংবাদিক কাজী আলম বাবুর একটি লেখা পড়েছিলাম। শিরোনাম ছিল, ‘ক্রীড়া সাংবাদিকতা কি শুধুই থ্যাংকলেস জব!’ লেখাটি বাবুর তথা তখনকার দিনের ক্রীড়ালেখক-সাংবাদিকদের দুঃখ-কষ্ট, রাগ-ক্ষোভ, পাওয়া-না-পাওয়া, আনন্দ-বেদনার চালচিত্র অনেকখানি ফুটে উঠেছিল। এরপর সময় অনেকটাই গড়িয়ে গেছে। পার হয়ে গেছে তিন দশক। অর্থাৎ ত্রিশটি বছর। বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার অনেক উত্থানপতন হয়েছে। একসময় এনায়েতউল্লাহ খান, আতিকুজ্জামান খান, এ বি এম মূসা, ওয়াহিদুল হক, কামাল লোহানী, মতিউর রহমান চৌধুরীরা ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে পেশা বা ফুলটাইম চাকরি হিসেবে গ্রহণ না করলেও এবং কাজী আলম বাবু, ফরদাদ মান্নান টিটো, আরিফ খন্দকার, জাকারিয়া হোসেন, মনিজা রহমান, চিং এষাসহ অনেক প্রতিভাবান ক্রীড়া সাংবাদিক প্রাচুর্যের আশায় সেই যে বিদেশে গেছেন আর ফেরেননি। প্রবাস জীবন শেষে ফজলে রশিদ, শেখ আইনুল হক, আবদুস শুকুর, মাহবুবুল হাসান নীরুরা ফিরেছেন মৃত্যুর বার্তা নিয়ে। সেদিন যে কারণে অনেক ঋদ্ধ-ক্রীড়া সাংবাদিক প্রবাসজীবন বা অন্য পেশাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, আজ হয়তো অনেক ক্রীড়া সাংবাদিক সেটা করবেন না। কেননা ক্রীড়া সাংবাদিকতার সেদিনের চেহারা আজ অনেকটাই বদলে গেছে। কেবল ক্রীড়া সাংবাদিকতা করে আজ অনেকে বাড়ি-গাড়ি নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। সে আয়েশি জীবন ছেড়ে অনেকেই অনিশ্চয়তার প্রবাস জীবনের কথা ভাববেন না নিশ্চয়ই!


আজকের ক্রীড়া সাংবাদিকতা কেবল ‘থ্যাংকলেস জব’র গণ্ডিতে আটকে নেই। আজ ক্রীড়া সাংবাদিকরা শ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। অনেকে গাড়ি, বাসস্থানসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সেটা ছেড়ে কে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়াবেন! একটা সময় ক্রীড়া সাংবাদিকতা ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন কোনো ক্রীড়া সাংবাদিক খেলা কাভার করতে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা বা রাজশাহী যাওয়াকে অনেক বড়ো ব্যাপার বলে মনে করতেন। গেমস কাভার করতে বিদেশ যাওয়া! সেটা তো অনেকে ভাবতেও পারতেন না। অনেক খ্যাতিমান ক্রীড়া সাংবাদিকের জীবনে একবারও বিদেশে খেলা কাভার করতে না যাওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। আজ খেলার পরিধি কেবল দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সেটা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রীড়াবিশে^। আর সে কারণে ক্রীড়া সাংবাদিকরাও আজ ভীষণ ব্যস্ত। আজ দিল্লি তো কাল অস্ট্রেলিয়া অথবা পরশু আমেরিকা।


বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার গোড়ার ইতিহাস অনেকের অজানা। শ্রদ্ধেয় অগ্রজ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, ইকরামউজ্জমান, বন্ধুজন দুলাল মাহমুদরা এ নিয়ে অনেক লেখেছেন। আমি নিজেও খুব একটা কম লেখিনি। আমার লেখার উদ্দেশ্য হল, এসব ইতিহাস একদিন বিস্মৃত হয়ে যাবে, কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে অথবা সময়ের হাত ধরে বদলে যাবে। কাগজের পাতায় লেখা থাকলে সেটা কোথাও না কোথাও সংরক্ষিত থাকবে। ফলে তা আগামী দিনের উৎসাহী ক্রীড়া গবেষকদের উপকারে আসতে পারে।


পত্রিকা প্রকাশের প্রথমদিকে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতায় কলকাতাকেন্দ্রিক কিছু বাংলা দৈনিক প্রকাশিত হলেও তাতে খেলার খবর খুব একটা প্রাধান্য পেত না। আগেই বলা হয়েছে, দৈনিক আজাদ ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর, দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক, ডেইলি মর্নিং নিউজ, ডেইলি অবজারভার এবং পূর্বদেশ, ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীসহ আরো কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হলেও সেখানেও যে খেলার খবর খুব বেশি প্রাধান্য পেত, তা-ও নয়। খুব বড়ো কোন খেলা হলে তার একটা ছোট্ট খবর পত্রিকার এক কোণে এক বা দুই কলামে ঠাঁই পেত। সেটাও করতেন কোন পার্টটাইম স্পোর্টস রিপোর্টর। যতটা জানা যায়, পার্টটাইম স্পোর্টস রিপোর্টারের কাজটা প্রথম যিনি শুরু করেন তিনি ‘দৈনিক আজাদ’র চিফ রিপোর্টার সৈয়দ জাফর আলী। তিনি খেলা ভালোবাসতেন বলে নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিজ আগ্রহে এ কাজটি শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি পরবর্তী সময়ে প্রয়াত ঋদ্ধ সাংবাদিক এ বি এম মূসা, আনিসুল মওলাসহ আরো অনেকে খেলার প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজ নিজ কাজের পাশাপাশি পার্টটাইম স্পোর্টস রিপোর্টিংকে বেছে নেন। তারা যে নিয়মিত স্টেডিয়ামে যেতেন তা নয়। বড়ো কোন খেলা থাকলে মাঝেমধ্যে স্টেডিয়ামে ঢুঁ মারতেন, যা খেলার খবর পেতেন. তা-ই লিখে দিতেন। আর পাঠক গোগ্রাসের মতো সেটাই গিলত।


ফলে অল্প সময়ে পত্রিকার মালিকরা বুঝতে পারেন, এ দেশের খেলাপাগল পাঠক আরও বেশি খেলার খবর পড়তে চায়। পাঠক যা চাইবে, পত্রিকা তো সেটাই দেবে। আর তাই আজাদের তৈরি করা পথে হাঁটতে শুরু করে ইত্তেফাক, অবজারভার, মর্নিং নিউজ, পূর্বদেশসহ অন্যসব পত্রিকা। পাঠকের খেলার খবরের প্রতি ভালোবাসা দেখে ডেইলি মর্নিং নিউজ প্রথম একজন ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টর নিয়োগ দেয়। সেটা ১৯৫৭ বা ’৫৮ সালের দিকে। প্রথম যিনি ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পান, তিনি একজন বিদেশি সাংবাদিক ‘ডেভিডসন’। যদিও এ নিয়ে দু-একজনের মতপার্থক্য আছে, তবে ‘ডেভিডসন’কেই প্রথম ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টার ধরা হয়। একই পত্রিকার আনিসুল মওলাকে করা হয় ‘স্পোর্টস এডিটর’ বা ‘হেড অব স্পোর্টস’। মর্নিং নিউজ’র পথ ধরে একে একে অন্য পত্রিকাগুলোও স্পোর্টস রিপোর্টার নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়। আর এ কাজটিতে আরও খানিকটা এগিয়ে যায় ডেইলি অবজারভার। তারাও ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টার নিয়োগ, খেলার পাতার পরিসর বৃদ্ধি ও ফিচার পাতার প্রতি মনোনিবেশ করে। এ সময়ে কৃতী ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক ডেভিডসন ছাড়াও আরেক বিদেশি রোজারিও, আতিকুজ্জামান খান, এ বি এম মূসা, বদরুল হুদা চৌধুরী, আবদুল আওয়াল খান, আনিসুল মওলা, মাশির হোসেন, মিজানুর রহমান, এস এ মান্নান লডু ওয়াহিদুল হক, রেজাউল হক বাচ্চু (চট্টগ্রাম), বদরুল হুদা চৌধুরী, মিনু খাদেম, আবদুল হামিদ, বদি-উজ-জামান, বিডি মুখার্জি, আতাউল হক মল্লিক, ফজলে রশিদ, এম এ রশিদ, তওফিক আজিজ খান, রউফুল হাসান, মাসুদ আহমেদ রুমী, আজম মাহমুদ, মোহাম্মদ মুসা প্রমুখ ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে নিরলস কাজ করে যান। তারা ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বলা যায়, তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের ক্রীড়া সাংবাদিকতা।


বাংলা পত্রিকায় ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টার নিয়োগ দেওয়া হয় অনেকটা দেরিতেই। ইংরেজি পত্রিকার অনেক পরে। ষাটের দশকে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ (যেটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক বাংলা’য় রূপান্তরিত হয়) প্রথিতযশা ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানকে প্রথম ‘ফুলটাইম স্পোর্টস রিপোর্টার’ হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর একে একে অন্য পত্রিকাগুলোও ক্রীড়া সাংবাদিকের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করে। একটা পিচঢালা মসৃণ হাইওয়ে দেখে আমরা যেমন ভুলে যাই সেখানে একদিন ধু-ধু মাঠ, সে মাঠে কাদামাটির পথ, তারপর ইট-সুড়কির রাস্তার কথা, তেমনি আজ আমরা অনেকেই এসি রুমে দামি রিভলভিং চেয়ারে বসে আমাদের অগ্রজদের সে অবদানের কথা বলতে গেলে ভুলেই গেছি। তাঁদের সেই ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের ফসল আজকের ক্রীড়া সাংবাদিকতার এই আলোকিত দিন। অথচ আমরা অনেকে অতিসহজে আমাদের অতীতকে ভুলে যাই। ক্রীড়া সাংবাদিকদের আজকের এই আবস্থা সব সময় ছিল না। তখনকার সময়ে অনেকের আবার নিজস্ব টেবিল-চেয়ারও ছিল না। পালা করে বসতে হতো। টেবিলের এক কোণে ভাঙা চেয়ারে বসেও খেলার রিপোর্ট করতে হয়েছে অনেককে। ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে তাঁদের। আজ তো দামি চেয়ার-টেবিল, এসি রুম সবই পাচ্ছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা।


এখানে একটা কথা বলা দরকার, অনেকে জানেন আবার অনেকে হয় তো জানেন না; সাংবাদিকতা তথা ক্রীড়া সাংবাদিকতার দুইটি দিক রয়েছে। একটা হচ্ছে- নিজে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করা। অর্থাৎ নিজে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আরেকটি দিক হচ্ছে- নিজে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি ক্রীড়া সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ নিজের পেশার পাশাপাশি আরো অনেক ক্রীড়ালেখক-সাংবাদিক সৃষ্টি করা। অনেকেই ক্রীড়ালেখক-সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং নিজে বড়ো মাপের ক্রীড়ালেখক-সাংবাদিক হয়েছেন। তবে নতুন ক্রীড়ালেখক-সাংবাদিক সৃষ্টিতে তাদের অবদান অনেকাংশেই কম। আবার অনেকে নিজ পেশার পাশাপাশি নতুন ক্রীড়ালেখক-সাংবাদিক সৃষ্টিতে বড়ো ভূমিকা পালন করেছেন। এ কাজটি যারা করেছেন বা করে যাচ্ছেন, তার সংখ্যাও খুব বেশি নয়। তাঁদের মধ্যে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার স্পোর্টস এডিটর মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, দৈনিক ইকিলাবের পরবর্তী সময়ে দৈনিক আমাদের সময়ের স্পোর্টস এডিটর ও কিংবদন্তি ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার প্রয়াত আবদুল হামিদ, সব্যসাচী ক্রীড়া সাংবাদিক ও অনেক পত্রিকার স্পোর্টস এডিটর প্রয়াত আতাউল হক মল্লিক, পাক্ষিক ক্রীড়া জগতের নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত সালমা রফিক, দৈনিক বাংলার বাণীর স্পোর্টস এডিটর ও পাক্ষিক ক্রীড়া জগতের বর্তমান সম্পাদক বন্ধুজন দুলাল মাহমুদ, পাক্ষিক ক্রীড়ালোকের নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত-বন্ধু মাহবুবুল হাসান নীরু, যমুনা টিভির ক্রীড়া সম্পাদক রানা হাসানের নাম না বললেই নয়। তাঁরা ছাড়াও আরো অনেকেই কোনো বিনিময়ের কথা না ভেবেই নীরবে এই কাজটি করে যাচ্ছেন। তাঁদের এই অবদানের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।


আগে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ধারা এক রকম ছিল- প্রিন্ট মিডিয়া। সময় বদলেছে। সময়ের বিবর্তনে ক্রীড়া সাংবাদিকতা এখন তিন ধারায় বিভক্তÑ প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন স্পোর্টস মিডিয়া। এ তিন ধারার ক্রীড়া সাংবাদিকতাও তিন রকম। একটাতে তথ্য পাওয়ার জন্য পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলেও অন্যটায় পরের খবরের সময় পর্যন্ত এবং শেষটাতে অপেক্ষার বালাই নেই। খেলা শেষ হওয়ামাত্র আপলোড করা সংবাদ স্ক্রিনে চলে আসে। ফলে মানুষ এখন তৃতীয় ধারায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণে পত্রিকার নিউজ বা টিভির খবর অনলাইনে পাওয়া যায়।


আরো একটা কথা বলা দরকার, আগেই বলা হয়েছে যে ডেইলি মর্নিং নিউজ খেলার খবর প্রকাশের অগ্রপথিক হিসেবে গণ্য হয়ে আছে। তারা প্রথম একজন পেশাদার স্পোর্টস রিপোর্টার ও স্পোর্টস এডিটর নিয়োগ দেয়। এছাড়া এ পত্রিকা প্রথম পূর্ণপৃষ্ঠা খেলার খবর ছাপে। এ পত্রিকায়ই প্রথম পূর্ণপৃষ্ঠা খেলার ফিচার পাতা ছাপা হয়। তখন দেশের শীর্ষ ক্রীড়ালেখকরা সে ফিচার পাতায় লিখতে থাকেন। এরপর ডেইলি অবজারভারও এ কাজটি শুরু করে। ইংরেজি পত্রিকা ছাড়াও আজাদ, সংবাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলাসহ অনেক বাংলা পত্রিকা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ফুল পেজ স্পোর্টস নিউজ ছাপতে শুরু করে। তবে ১৯৯২ সালে দৈনিক ‘আজকের কাগজ’ প্রকাশিত হওয়ার পর খেলার খবর ভিন্নমাত্রা পায়। প্রিয়বন্ধু এবং এ পত্রিকার স্পোর্টস এডিটর ফরহাদ মান্নান টিটোর নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণের খেলার খবরকে সাহিত্যের সংমিশ্রণে সরস পরিবেশনায় ক্রীড়ানুরাগী পাঠক আকৃষ্ট হয়। ফুলপেজ রঙিন এ পাতায় খেলার খবর ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন ছবিও পাঠক হৃদয় কাড়ে। টিটোও দেশ ছেড়েছেন, কানাডাপ্রবাসী। তবে টিটোর শুরু করা পথে প্রিন্ট মিডিয়ায় সদর্পে দাপিয়ে চলেছেন প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র, জনকণ্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমান, কালের কণ্ঠের ডেপুটি এডিটর মোস্তফা মামুন, ইলেকট্রনিক স্পের্টস মিডিয়ার দিলু খন্দকার, শহিদুল আজম ও পরাগ আরমানরা। এখন তো প্রতিদিন দুই বা চার পৃষ্ঠাও খেলার খবর ছাপা হচ্ছে। বলতে গেলে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় টিভিতে খবর দেখা যাচ্ছে। আর অনলাইন পত্রিকায় তো সঙ্গে সঙ্গে আপলোড হচ্ছে। আর ক্রীড়ামোদি পাঠক সেটা লুফেও নিচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে ক্রীড়া সাংবাদিকতার চালচিত্র। যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা।


লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক, ক্রীড়ালেখক ও সভাপতি, বাংলাদেশ লেখক পরিষদ

শেয়ার করুনঃ

এখানেই থেমে যাওয়া নয়

আরও যা পড়তে পারেন

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভির চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে দুই দশক ধরে গণমাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা

জনগণের কাছে সমাজের নানা ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যম ‘ওয়াচডগের’ ভূমিকা পালন করে। মানুষের জানার অধিকার বা আগ্রহ থেকে

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা: সাংবাদিকতার সুযোগ

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সাংবাদিকতায় পরিবর্তন দৃশ্যমান। দুই দশক আগে স্বাস্থ্য নিয়ে যে পরিমাণ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেত, এখন তার চেয়ে বেশি সংবাদ প্রচারিত হয়।

সাংবাদিকতায়
হাতে-খড়ি হোক
পিআইবির সাথে

সাংবাদিকতা বিষয়ে ই-লার্নি  কোর্স করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন। বিস্তারিত জানতে ই-মেইল করুন support@pibelearning.gov.bd ঠিকানায়