শুভ কর্মকার

পশ্চিমা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি ডিজিটাল এবং মাধ্যমবাহিত হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রথাগত মাধ্যম ও ডিজিটাল মাধ্যমের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিনিয়ত অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। শিল্প সমাজের পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে তথ্য সমাজে রূপান্তরিত করে চলেছে ডিজিটাল মিডিয়া। পূর্বের সম্পর্ক বিধানের পরিবর্তে ডিজিটাল সংস্কৃতি ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ইন্টারনেটের বদৌলতে আমরা অনেক বেশি জনগণের কাছাকাছি যেতে পারছি। মিডিয়া এবং মিডিয়ার বিষয়বস্তু শৈশব, যৌবন এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যকার সীমানা তুলে দিয়েছে। বয়সের ভেদাভেদ ভুলে সব ধরনের তথ্যে সবার প্রবেশযোগ্যতার অনুমতি মিলেছে। ফলে এই ধরনের পরিবেশে গণমাধ্যম সাক্ষরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে মানবাধিকারের প্রশ্নে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রশ্ন তো আছেই, বিশেষ করে শিশুদের নিরাপদ গণমাধ্যম ব্যবহারকে কেন্দ্র করে মানবাধিকারের বিষয়টি সামনে আসে। আরেকটি বিষয় হলো- তথ্যপ্রযুক্তি মানুষকে স্বনির্ভর করে তুলেছে। গণমাধ্যমের অফুরান তথ্যের মধ্যে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করা কঠিন কোনো কাজ না। তবে ‘সঠিক’ আর ‘ভুল’ তথ্য খুুঁজে বের করা সত্যিই কঠিন। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত ‘ফেকনিউজ’, ‘গুজব’, ‘মিথ্যা তথ্য’, ‘ভুল তথ্য’ গণমাধ্যম সাক্ষরতার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোয় এখনও গণমাধ্যম শিক্ষা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারেনি। আলোচ্য প্রবন্ধে গণমাধ্যম সাক্ষরতা, গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার উপকারিতা, গণমাধ্যম সাক্ষরতার মৌলিক নীতি, গণমাধ্যম শিক্ষার পাঠক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা

গণমাধ্যম প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম শিক্ষা বিকশিত হয়েছে। গণমাধ্যম ও গণযোগাযোগের যুগে গণমাধ্যমের বার্তা গ্রহণে অবধারণগত এবং সমালোচনামূলক সক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা এই প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা গণমাধ্যমের বার্তায় প্রবেশযোগ্যতার পাশাপাশি বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করার সক্ষমতা তৈরি করে। গণমাধ্যম প্রদত্ত বার্তাকে ব্যবহার, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও সমালোচনা করার জ্ঞান, দক্ষতা এবং সক্ষমতা তৈরি করার প্রক্রিয়াই গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা।  

গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার উপকারিতা

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর মিডিয়া লিটারেসি গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার ১০টি উপকারের বিষয় উল্লেখ করে।

ক. গণমাধ্যমের বুদ্ধিমান ভোক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাবে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা।

খ. গণমাধ্যম বিশ্বের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের সংযুক্ত হওয়ার ফলে ‘বাস্তব জীবন’ শিক্ষায় ব্যস্ত থাকবে শিক্ষার্থীরা।

গ. শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমালোচনামূলক চিন্তা করার সক্ষমতা তৈরি হবে।

ঘ. সব বিষয় একীভূত করার সম্ভাবনার ক্ষেত্র এবং সব ডিসিপ্লিনে প্রয়োগ করা যায় এমন সাধারণ শব্দভান্ডার তৈরি করবে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা।

ঙ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের পছন্দনীয় সমকালীন গণমাধ্যম উৎপাদনের মান বুঝতে সাহায্য করে।

চ. মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের চিন্তা ও ধারণার যোগাযোগ (প্রচার/প্রকাশ) এবং বিচ্ছুরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

ছ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা হলো ‘অনুসন্ধান প্রক্রিয়া’। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে (প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য প্রদান করেন) থেকে শিক্ষা প্রদান করার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষা প্রদান করবেন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে।

জ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা বিষয়বস্তুর জ্ঞানের পরিবর্তে প্রক্রিয়াগত দক্ষতার (যেমনÑ গণমাধ্যমের ব্যবহারিক দিক ভিডিওচিত্র ধারণ করা, সম্পাদনা করা, স্থিরচিত্র তোলা ইত্যাদি) ওপর গুরুত্ব প্রদান করে।

ঝ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এ সম্পর্কিত রেপ্লিকেবল মডেল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান প্রদান করতে হবে।

ঞ. এ শিক্ষা ব্যক্তিগতভাবে শুধু শিক্ষার্থীদেরই উপকার করে না বরং সমাজও উপকৃত হয়।

গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার মৌলিক নীতি

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার জাতীয় সংস্থা (NAMLE) গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার মৌলিক নীতিমালা তুলে ধরে। মৌলিক নীতিগুলো হলো:

ক. আমরা গণমাধ্যম থেকে যেসব বার্তা গ্রহণ এবং তৈরি করি, সেসব বার্তার জন্য গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষায় প্রয়োজন সক্রিয় অনুসন্ধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তা। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত বার্তাকে সমালোচনা ও সক্রিয় অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে দেখতে হলে শিক্ষার মধ্যে অবশ্যই বেশকিছু বিষয়ের সমন্বয় থাকতে হবে। বিষয়গুলো হতে পারে:

– গণমাধ্যমের সব বার্তাই ‘নির্মিত’।

– প্রত্যেকটি মাধ্যমের বৈশিষ্ট্য, শক্তি আলাদা এবং নির্মাণের ভাষাও অনন্য।

– বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য গণমাধ্যমের বার্তা উৎপন্ন হয়।

– সব গণমাধ্যমের বার্তাই দৃষ্টিকোণ এবং অনুবিদ্ধ মূল্য ধারণ করে।

– গণমাধ্যমের বার্তা থেকে সাধারণ জনগণ তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা, বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার দ্বারা নিজস্ব অর্থ উৎপন্ন করে।

– গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের বার্তা বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্য, আচরণ, এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। 

গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শক্ত সমালোচনাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। সমালোচনাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার অর্থ শুধু গণমাধ্যম বার্তা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা নয়। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমের সমালোচনা করতে সহায়তা করে।

খ. গণমাধ্যমের সব ধারা নিয়েই গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার ধারণা (যেমন- লেখা, পড়া) বিস্তৃত হয়েছে। মুদ্রণ সাক্ষরতার বিষয়ে পড়া এবং লেখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমে যেমন- প্রথাগত মুদ্রণ, ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, গ্রাহক-সৃষ্ট এবং তারবিহীন মাধ্যম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। গণমাধ্যমের গঠন, সমাজের পরিবর্তন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ জ্ঞান দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম ‘টেক্সট’ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

গ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা সব বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য দক্ষতা তৈরি ও শক্তিশালী করে। প্রথাগত বিদ্যায়তনিক সাক্ষরতার মতো গণমাধ্যম সাক্ষরতার দক্ষতাগুলো সমন্বিত, মিথস্ক্রিয় এবং পুনঃপুনঃ অনুশীলনের প্রয়োজন। গণমাধ্যম সাক্ষরতার দক্ষতা ‘আছে অথবা নেই’ এভাবে বলা যাবে না। গণমাধ্যম সাক্ষরতা হলো দক্ষতা, জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতা। প্রথাগত শিক্ষার মতো দিনে একটি বা সপ্তাহে দুটি ক্লাসের মতো গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা প্রদান করা যাবে না। বরং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ তৈরির মধ্য দিয়ে বিশ্লেষণ ও প্রকাশের দক্ষতার উন্নয়ন ও চর্চা করাতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাদান পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা প্রদান করতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা তখনই কার্যকর হবে, যখন সহশিক্ষা জ্ঞানকাণ্ড ব্যবহার করা হবে। এই সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষক শিখবে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও ক্লাসমেট উভয়ের কাছ থেকেই শিখবে। গণমাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে এবং গণমাধ্যমের বার্তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম হবে। গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখবে। গণমাধ্যমে কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি ঘটনা ‘সংবাদ’ হয়ে ওঠে, সেটি জানলে শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমের বার্তা সম্পর্কে সুষ্ঠু বিচার করতে সক্ষম হবে।

ঘ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম বার্তা সম্পর্কে অবগত করে এবং বার্তায় অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির জন্য অপরিহার্য। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নিজ দেশের গণমাধ্যম বার্তা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা শেখাবে, ফলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ এবং চলমান ঘটনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা আরও বেশি বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যাবে। গণমাধ্যমের বার্তার ‘রিপ্রেজেন্টেশন’, ‘ভুল রিপ্রেজেন্টেশন’ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে দেশীয় সংস্কৃতির রিপ্রেজেন্টেশনের অভাব ইত্যাদি বিষয় শিক্ষার্থীরা খুঁজে বের করতে শিখবে। গণমাধ্যম বার্তার অর্থ তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কাঠামো (যেমন- মালিকানা, বিতরণ ইত্যাদি) কীভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থী পূর্ণজ্ঞান অর্জন করবে।

ঙ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা গণমাধ্যমকে সামাজিকীকরণের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়, যা সংস্কৃতি এবং কার্যক্রমের অংশ। গণমাধ্যমের বার্তা সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন ভিন্ন কণ্ঠস্বরের উপস্থাপন করে থাকে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিকল্প মাধ্যম পরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার মধ্যে অবশ্যই সহিংসতা, লিঙ্গবৈষম্য, যৌনতা, বর্ণবাদ, এবং রিপ্রেজেন্টেশন হতে পারেÑ এমন অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা থাকবে।

চ. গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা নিশ্চিত করে যে, মানুষ তার ব্যক্তিগত দক্ষতা,বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা দ্বারা গণমাধ্যম বার্তা থেকে নিজস্ব অর্থ তৈরি করে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা এটা শেখাবে না যে, শিক্ষার্থীরা কী চিন্তা করবে। শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব মূল্য দিয়ে কীভাবে বার্তা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছবে সে বিষয়টি গণমাধ্যম সাক্ষরতায় শেখানো হবে। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মূল্যবোধের সঙ্গে গণমাধ্যম বার্তাকে মিলিয়ে অর্থ তৈরির বিষয়ে সচেতন থাকবে। গণমাধ্যমের বার্তার ‘সত্য’, ‘সঠিক’, অথবা ‘অন্তর্নিহিত’ অর্থ উন্মোচন করা বা চিহ্নিত করার বিষয়ে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা সহায়তা প্রদান করবে। গণমাধ্যম বার্তার ‘ভালো’ এবং ‘খারাপ’ অর্থ উন্মোচন করার বিশ্লেষণাত্মক বোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হবে। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণমাধ্যম বার্তার ব্যাখ্যার ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। এটিকে ভুল বলা যাবে না। বয়স এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের বার্তার অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। দলীয় আলোচনা এবং গণমাধ্যম বার্তার বিশ্লেষণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে। নিজস্ব পছন্দের প্রেক্ষিত্রে বার্তা সম্পর্কে সিদ্ধান্তও আলাদা আলাদা হতে পারে। 

গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার পাঠক্রম (সম্ভাব্য)

বিভিন্ন দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোর গণমাধ্যম সাক্ষরতা বিষয়ের পাঠক্রম বিশ্লেষণ করে বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাব্য গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার পাঠক্রম তুলে ধরা হলো:

ক. প্রাথমিক জ্ঞান: গণমাধ্যমের সংজ্ঞা, গণমাধ্যম অধ্যয়ন, গণমাধ্যম সাক্ষরতা

খ. গণমাধ্যম বার্তার অর্থ উৎপন্ন: ভাষা, রিপ্রেজেন্টেশন এবং ভাষার উদ্দেশ্য, গণমাধ্যম বার্তা কারা উৎপন্ন করে

গ. গণমাধ্যম ব্যবস্থাপকরা বার্তা বিশ্বাসযোগ্য করতে কী কী উপাদানের সমন্বয় ঘটায়, প্রভাবনের যন্ত্র

ঙ. ‘পক্ষপাত’, ‘অর্থ উল্টানো’, ‘ভুল তথ্য’, ‘মিথ্যা’, ‘ফেক নিউজ’, ‘গুজব’ সম্পর্কে পরিচিতকরণ

চ. গণমাধ্যম বার্তার না-বলা বিষয়গুলো উন্মোচন করা (শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করতে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বর্ণনা)

ছ. শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের ভিত্তিতে গণমাধ্যমের বার্তাকে মূল্যায়ন করা (ব্যবহারিক ক্লাস)

জ. গণমাধ্যম বার্তা নির্মিত চিত্র বা ভিডিওচিত্রের রং, আঙ্গিক, গভীরতা, চিত্র ও ভিডিওচিত্র বিশ্লেষণ (ব্যবহারিক ক্লাসের অংশ হিসেবে চিত্র ও ভিডিওচিত্র নির্মাণের প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করতে হবে। এছাড়া তাত্ত্বিক বিষয়ের উপস্থিত থাকবে)।

ঞ. বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে দার্শনিক ভিত্তি: সেমিওটিক্স, ডিসকোর্স, মতাদর্শ, হেজিমনি, ন্যারোটলজি, ফেমিনিজম, পোস্ট ফেমিনিজম, নৃতত্ত্ব, মার্ক্সবাদ ইত্যাদি

জ. গণমাধ্যমের বার্তা তৈরি ও বিতরণ প্রক্রিয়া

ঝ. গণমাধ্যমের বার্তা পরিবর্তনের জন্য পরামর্শক হওয়া

ঞ. গণমাধ্যমের বার্তা তৈরি প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদান

লেখক: প্রভাষক, পিআইবি

শেয়ার করুনঃ

এখানেই থেমে যাওয়া নয়

আরও যা পড়তে পারেন

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভির চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে দুই দশক ধরে গণমাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা

জনগণের কাছে সমাজের নানা ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যম ‘ওয়াচডগের’ ভূমিকা পালন করে। মানুষের জানার অধিকার বা আগ্রহ থেকে

ক্রীড়া সাংবাদিকতার সেকাল-একাল

দ্দূর জানা যায় বা গুগল-উইকিপিডিয়া ঘেঁটে দেখা যায়, ছাপার অক্ষরে প্রথম দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় সতেরো শতকের শেষদিকে।

সাংবাদিকতায়
হাতে-খড়ি হোক
পিআইবির সাথে

সাংবাদিকতা বিষয়ে ই-লার্নি  কোর্স করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন। বিস্তারিত জানতে ই-মেইল করুন support@pibelearning.gov.bd ঠিকানায়