সাকী আহসান
অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ইন্টারনেটের এই সময়ে ‘ভুয়া খবর’ মানবজীবনকে অনেক বেশি প্রভাবিত করছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম বাই-প্রোডাক্টে পরিণত হয়েছে ভুয়া খবর। এর জন্ম কবে, কোথায়, কীভাবে, খবরের অতীত-ইতিহাস ঘেটে কোনো গবেষক হয়তো বের করতে পারবেন এর ঠিকুজি-কোষ্ঠী। ভুয়া খবরের উদ্ভব নিয়ে সম্প্রতি আগ্রহোদ্দীপক কথা বলেছেন ক্যাথলিক চার্চ-এর প্রধান ধর্মগুরু ২৬৬তম পোপ ফ্রান্সিস। বাইবেলের নিদর্শন দিয়ে তিনি বলেছেন, ইভকে যখন সাপ নিষিদ্ধ ফল খেতে প্ররোচিত করেছিল, তখনই ভুয় খবরের জন্ম হয়েছিল।
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, আদম ও ইভকে স্বর্গের জ্ঞাণবৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেন ঈশ্বর। ইভকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেতে প্ররোচিত করে সাপ বলে যে, এই ফল খেলে তোমরা ভালো-মন্দ বিষয়ে জ্ঞান পাবে। সাপের প্ররোচনায় ইভ নিজে সেই ফল খায় এবং আদমকেও খেতে প্ররোচিত করে। ঈশ^র যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, কেন তার নিষেধ অমান্য করে তারা জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়েছে তখন ইভ বলেছিলেন, সাপটা তাদেরকে মিথ্যে বলে প্ররোচিত করেছে। ইভ-এর সেই উত্তর ঈশ্বরের মনঃপুত হয়নি। জ্ঞানবৃক্ষের ফল না খাওয়ার আদেশ অমান্য করায় মানুষকে স্বর্গচুত্য করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন তিনি। সাপের সেই মিথ্যেকেই ভুয়া খবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। ভুয়া খবর কতটা গর্হিত অপরাধ সে কথাও বলতে ভোলেননি তিনি। তার মতে, ভুয়া খবর হচ্ছে- আদমকে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ানোর মতো।
কে ছড়ায় ভুয়া খবর
ধর্মগুরু থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত ভুয়া খবর নিয়ে কথা বলেছেন। বিশ^নেতাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জন ট্রাম্পই এ বিষয়ে বেশি সোচ্চার। বাইবেলের বিবরণ বিবচনায় নিলে বলতে হবে- সাপ-এর মতো কূটিল চরিত্রের কেউই ছড়ায় এই ভুয়া খবর। অবশ্য ট্রাম্পের মতে, গণমাধ্যমগুলোই ভুয়া খবর ছড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই দেশটির সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ আনছেন। সংবাদমাধ্যমকে অসৎ আখ্যা দিয়ে তিনি এমন কথাও বলেছেন যে,
সংবাদমাধ্যমগুলো কোনো সূত্র ছাড়াই একের পর এক ভুয়া খবর দেয়। সংবাদমাধ্যম ‘সত্য তুলে ধরতে’ চায় না, তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য আছে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকেরা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থারই অংশ। ট্রাম্পের ঢালাও অভিযোগ শুনে মনে হতে পারে, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ নয় বরং রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধনে সদাতৎপর অশুভ এক মাধ্যম। আর সাংবাদিকরা হচ্ছেন বাইবেল বর্ণিত সেই সাপের মতো কুটিল চরিত্রের কেউ।
নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারিতে ‘ফেইক নিউজ অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির কয়েকটি গণমাধ্যমকে তিনি ‘সবচেয়ে অসৎ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংবাদমাধ্যম’ হিসেবে আখ্যা দেন। তার তথাকথিত ফেইক অ্যাওয়ার্ডজয়ী শীর্ষ ১০টি সংবাদমাধ্যমের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকার শীর্ষে ছিল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্বিতীয় স্থানে ছিল এবিসি নিউজ এবং তৃতীয় স্থানে ছিল সিএনএন।
গণমাধ্যমে যে কখনো ভুয়া খবর বের হয় না বা কোনো কোনো সাংবাদিক যে ভুয়া খবর ছড়ান না, তা নয়। ভুয়া খবর সৃষ্টির জন্য মার্কিন মুল্লুকে কুখ্যাত ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক পাউল হর্নার। তার ছড়ানো অনেক মিথ্যে সংবাদ ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনের সময় তিনি অনেক ভুয়া খবরের জন্ম দিয়েছেন। এসব খবরের বেশিরভাগই ট্রাম্পের পক্ষে গিয়েছে। হর্নার অবশ্য দাবি করতেন, তিনি ভুয়া খবর প্রকাশ করেন না, বরং মশকরা করেন। কেউ যদি তার মশকরাকে গুরুত্বসহকারে নেয় এবং শেয়ার করে, তবে তাদের নিন্দাই করতে হবে বলে তিনি মনে করতেন।
সব দেশেই কমবেশি এই অভিযোগ আছে যে, কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বা কোনো কোনো সাংবাদিক ইচ্ছে করেই ভুয়া খবর ছড়ান। একেই বলে হলুদ সাংবাদিকতা। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কোনো কোনো গণমাধ্যমকে ভুয়া খবর ছড়াতে দেখা গেছে। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যম ভুয়া খবর ছড়ায় যে, ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙায় ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায় মিষ্টি বিতরণ করেছে। এই খবরের জের ধরে দেশে সেসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা হয়।
ভুয়া খবর ছড়ানোয় এগিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম
ভুয়া খবর কেবল সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় না। কেবল হলুদ সংবাদমাধ্যম বা হলুদ সাংবাদিকরাই ভুয়া খবর ছড়ায় এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। ভুয়া খবর ছড়াতে পারে যে কেউ। প্রতিটি ভুয়া খবরের পেছনেই রয়েছে কোনো না কোনো স্বার্থান্বেষী মানুষ। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক মিথ্যা খবর ছড়ায় সাধারণত কট্টরপন্থী মনোভাবসম্পন্ন লোকেরা। আর সেটা ছড়াতে পারে যে কোনো যোগাযোগমাধ্যমে। বাস্তবে দেখা যায়, ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ভুয়া খবর বেশি ছড়াচ্ছে। অনেক সময় সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া খবর তৈরি করে ফেসবুক, টুইটার বা রেডিটের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। এর পেছনে কাজ করে লাখ লাখ ভুয়া অ্যাকাউন্ট। বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে তৈরি একটি গবেষণা দল ‘পলিটিক্যাল বটস’ শীর্ষক রিপোর্টে জানিয়েছেন, সোশাল মিডিয়া টুইটারে অন্তত ৩ কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গবেষক দল জানিয়েছেন, মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্পপন্থি বট প্রো-ক্লিন্টন বটের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ছিল। উভয় শিবিরের বটসেরই কাজ ছিল ভুয়া সংবাদ ছড়ানো।
ভুয়া খবরের প্রভাব
সমাজজীবনের বিভিন্ন স্তরে ভুয়া খবর যে কত ভয়াবহ প্রভাব রাখতে পারে দেশে দেশে তার বহু নজির রয়েছে। ভুয়া খবর অনেক সময় সমাজে বিদ্বেষ উসকে দেয়। যে বিদ্বেষ কখনো কখনো সহিংস রূপ ধারণ করে। যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী স্টিফেন লেভেনডোভেস্কির মতে, ‘সামাজিক পর্যায়ে রাজনৈতিক ইস্যুতে ধারাবাহিক ভুল তথ্য উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে।’
বাংলাদেশে একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার ভুয়া খবর ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। যার কারণে হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে। কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য ভুয়া খবর মূর্তিমান হুমকি। এটা রাজনৈতিক অস্থিরতাও সৃষ্টি করতে পারে যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে অনেক ভুয়া খবর প্রচার করা হয়। খবর রটে যে, চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখা গেছে। এমনও খবর রটে যে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মক্কায় কাবা শরীফে মানববন্ধন হয়েছে। এসব গুজবকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি দেশে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়ায় খবর রটে, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে এজন্য তার ফাঁসি হয়নি। এর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ মঞ্চ’র উদ্ভব হয়। আবার গণজাগরণ মঞ্চ ঘিরে খবর রটেÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিকারীরা নাস্তিক ব্লগার। তাদের বিচারের দাবিতে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন একই বছর মে মাসে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থান সমাবেশ করলে জাতীয় রাজনীতিতে চরম সংকট দেখা দেয়। সরকার অবশ্য সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল।
ভুয়া খবরের খারাপ দিক হচ্ছে এর সত্যাসত্য যাচাই না করেই সমাজের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ চরম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। খবরটি সত্য কি মিথ্যা সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করার মতো সাধারণ বোধবুদ্ধির পরিচয় দিতে অধিকাংশ মানুষ ব্যর্থ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের সিইও টিম কুক যথার্থই বলেছেন, ভুয়া খবর মানুষের চিন্তার মৃত্যু ঘটাচ্ছে।
ভুয়া খবরের শিকার কারা
ভুয়া খবরের কবলে পরতে পারেন যে কেউ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্বনেতা পর্যন্ত এর শিকার হন। তবে যখন রাজনীতিবিদ, অভিনয় শিল্পী, খেলোয়াড় বা কোনো সেলিব্রেটি ভুয়া খবরের শিকার হন তখন হৈচৈ পড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া খবরের শিকার ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা সুখকর হয় না। বিশেষকরে জাতিগত সংখ্যালঘু বা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের জন্য এটা বয়ে আনে দুর্ভোগ।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অঙ্গনে ভুয়া খবর বা ফেইক নিউজ এখন বহুল আলোচিত শব্দবন্ধ। সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি দেখা যায়। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম নিয়ামক হয়ে ওঠে ভুয়া খবর। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, রাশিয়া অনলাইনে ভুয়া খবর প্রকাশ করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হ্যাকিং-এর আশ্রয় নিয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর আরো অভিযোগ রয়েছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া ‘ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেন’ শুরু করে। ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেন হচ্ছে, অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ইচ্ছে করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনলাইনে নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা। রাশিয়ার ‘ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেন’ ঠেকাতে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কাউন্টার প্রোপাগান্ডা বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর ভুয়া খবর নিয়ে জার্মান নির্বাচনেও হৈচৈ হয়েছে। ফ্রান্স আর নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও অনেক ভুয়া খবরের জন্ম হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে বিশ্বজুড়ে রাজনীতিকরাই বোধহয় ভুয়া খবরের শিকার হচ্ছেন বেশি। মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প ও হিলারিকে নিয়ে অসংখ্য ভুয়া খবর বের হয়েছে। ইউরোপে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকরা এর শিকার হচ্ছেন। ডয়েচে ভেলের এক খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ইউরোপে ম্যার্কেলই সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর-এর শিকার হয়েছেন। বিশেষকরে তার শরণার্থী নীতিকে ঘিরে বহু মিথ্যা খবর রটানো হয়েছে। ভুয়া খবরে থেকে রেহাই পাননি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও। গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর একটি বিদেশি টিভি চ্যানেল ও একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন পত্রিকার সূত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে যে, ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে ধারাবাহিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্ত করেছিল নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। খবরে আরো বলা হয়, জঙ্গিদের সেই হামলা প্রতিহত করতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বিশেষ বাহিনীও যোগ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এই খবরকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে।
ভুয়া খবরের দায় কেবলই সংবাদমাধ্যমের?
ভুয়া খবরের প্রতি সবচেয়ে বিরূপ হন বুঝি রাজনীতিবিদরাই। আর এ কারণেই দেশে দেশে রাজনীতিবিদদের দেখা যায় ভুয়া খবর নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন করতে চান। আর রাজনীতিবিদরা ভুয়া খবর বলতে যেন সংবাদমাধ্যমকেই বোঝেন। সংবাদমাধ্যমের ভুয়া খবরে তারা যতটা ক্ষিপ্ত হন অন্য কোনো মাধ্যমের ভুয়া খবরে ততটা ক্ষিপ্ত হতে তাদের দেখা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেকে শুরু করে মিয়ানমারের ফার্স্ট স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি পর্যন্ত সব রাজনৈতিক নেতাই ভুয়া খবর নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। আর তাদের কাছে ভুয়া খবর মানেইÑ এটা গণমাধ্যমের কাজ। মিয়ানমারের নোবেলজয়ী অং সান সু চি সম্প্রতি বিশ্ব গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন। সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা, চ্যানেল নিউজ এশিয়ার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ‘ভুয়া খবর’ প্রচার করে বহির্বিশ্বে আরও বেশি অসন্তোষ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
গণমাধ্যম যখন ভুয়া খবরের শিকার
সবদেশের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেই কমবেশি ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। মজার বিষয় হচ্ছে গণমাধ্যমগুলোই কখনো কখনো ভুয়া খবরের শিকার হয়। বিবিসি বাংলার নাম ও লোগো ব্যবহার করে সম্প্রতি ভুয়া খবর তৈরি করা হয়েছে। সেই খবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের মেয়ের ভুয়া সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। কাল্পনিক সেই সাক্ষাৎকারে সুলতানা কামালের লন্ডন প্রবাসী মেয়ে তার মায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। বিবিসি বলেছে, এই সাক্ষাৎকারের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
অনেক সময় দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম ভুয়া খবরের শিকার হয়েছে। গত বছর ১৩ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অষ্ট্রেলিয়া যান। এর পর দিন প্রথম আলো’র মাস্টহেড ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সরকারের চাপের মুখে প্রধান বিচারপতির দেশত্যাগ’ শিরোনামে খবর পোস্ট করা হয়। সঙ্গে আরো একটি নিউজ ছাপা হয় যার শিরোনাম ছিল- ‘ক্ষমতা দেখাল সরকার’। মুহূর্তেই খবর দুটি ভাইরাল হয়। পরে প্রথম আলো প্রতিবাদ করে বলে দুটোই ভুয়া খবর। এই শিরোনামে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বাস্তবে পত্রিকাটির সংবাদের শিরোনাম ছিল- ‘আমি বিব্রত’, বিদেশ যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি। তাছাড়া উল্লিখিত শিরোনামের খবরটি সেদিনের লিড নিউজও ছিল না। একই দিনে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্যা ডেইলি স্টার’-এর মাস্টহেড এবং গেটআপ-মেকআপ নকল করে ‘চিফ জাস্টিস এক্সপোজেস দ্য গভর্নমেন্ট’ শিরোনামে ভুয়া প্রতিবেদন ছাপা হয়। ‘এ ডিজগ্রেস টু বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি ভুয়া মন্তব্য প্রতিবেদনও দেখা যায়। বাস্তবে সেদিন পত্রিকাটির প্রধান শিরোনাম ছিল ‘আই অ্যাম নট সিক’।
ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ভুয়া খবরের শিকার হয়
সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর প্রচারিত হয় ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। গণমাধ্যমের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ভুয়া খবরের কবলে পড়ে কখনো কখনো। সম্প্রতি ‘উইকলি ওয়ার্ল্ড নিউজ’ নামের একটি সংবাদ সংস্থায় ফেসবুক বন্ধের ভুয়া খবর ছাপা হয়। সেই খবরে ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ-এর কাল্পনিক সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়- মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ ফেসবুক নিয়ে জাকারবার্গ যারপরনাই বিরক্ত, এ কারণে তিনি ফেসবুক নামের অনলাইন উন্মাদনার পরিসমাপ্তি ঘটাতে চান। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেই খবরকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দেয়।
ভুয়া খবর এবং সরকারের ভূমিকা
বিশ্বজুড়েই ভুয়া খবরের প্রতিকার খোঁজা হচ্ছে। বাংলাদেশে আলোচনা চলছে যে, ভুয়া খবর প্রতিরোধে আইন নাকি সেল্ফ সেন্সরশিপ বেশি কার্যকর। বাংলাদেশে যখন ভুয়া খবরের প্রতিকার নিয়ে আলোচনা চলছে উন্নত বিশ্ব তখন এটা প্রতিরোধে আইন করার কথা ভাবা হচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, নির্বাচনের সময় অনলাইনে ভুয়া খবর রোধে নতুন আইন করা হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে ভুয়া খবরের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে আইনি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উন্নত বিশ্বের সরকারগুলোর মনোভাব প্রায় একই রকম। তারা মনে করে, ভুয়া খবরকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুয়া খবর তৈরি এবং প্রচারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির আইনপ্রণেতারা। জার্মান আইনপ্রণেতা প্যাট্রিক সেন্সবুর্গ বলেছেন, ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে।
তবে ভুয়া খবরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে সরকারি পদক্ষেপ নেয়ার কাজটি হয়তো সহজ হবে না। কেননা এ ধরনের উদ্যোগের সমালোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, একে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত বা গণ্য করলেই কি সমাধান মিলবে? অনেক বিশেষজ্ঞই উন্নত বিশ্বের সরকার বা রাজনীতিকদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, আইনি পদক্ষেপ নেয়া আর সেন্সরশিপ আরোপ করা একই কথা।
অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)-এর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক মুখপাত্র ডুঙ্গা মিজাতোভিকের মতে, সোশ্যাল মিডিয়া কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কারো যদি সহিংস কোনো পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ যোগ না থাকে বা কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। তার মতে, ভুয়া খবরের মতো সমস্যাকে কঠোর বিধিনিষেধের মাধ্যমে নয় বরং শিক্ষার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ হিসেবে পরিচিত মার্কিন নাগরিক এডওয়ার্ড স্নোডেন-এর মতে, ভুয়া খবর প্রতিরোধে সেন্সরশিপ কোনো সমাধান হতে পারে না। এর পরিবর্তে মানুষের মধ্যে ‘ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং’ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি।
ভুয়া খবর রোধে সরকারগুলোর ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছা যায়নি। তবে ‘ভুয়া খবর’ ঠেকাতে কোনো কোনো দেশ ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য জাতীয় নিরাপত্তা যোগাযোগ নামে নতুন একটি ইউনিট খোলার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এই ইউনিট অন্য রাষ্ট্রের ছড়িয়ে দেওয়া ভুয়া তথ্য চিহ্নিত ও মোকাবিলা করবে। ভুয়া সংবাদ রোধে ‘সেন্টার অফ ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডিসইনফরমেশন’ নামে একটি টিম গঠন করেছে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
ভুয়া খবর রোধের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার যে তৎপরতা শুরু করেছে সেটাকে অনেকেই ভালোভাবে নেননি। সরকারি তৎপরতাকে ভালোভাবে না নেয়া মানুষদের একজন হচ্ছেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ কম্পিউটারবিজ্ঞানী স্যার টিম বার্নার্স-লি। তিনি মনে করেন, সরকারি নজরদারি কখনো কখনো মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ কখনো কখনো নিজেই সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ করে দিচ্ছে অথবা অনেক খবর চেপে যাচ্ছে। তার মতে, ভুয়া খবরের বিস্তার রোধে সরকারের চেয়ে বরং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলোর ওপরই নির্ভর করা উচিত।
ভুয়া খবর প্রতিরোধের কাজে অনেকেই সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। তবে সরকারি হস্তক্ষেপ চাওয়া লোকের সংখ্যাও কম নয়। কেউ কেউ মনে করেন ভুয়া খবর প্রতিরোধে সরকারের তথ্য অভিযান চালানো দরকার। এদের দলে আছেন মার্কিন টেক-জায়ান্ট অ্যাপলের সিইও টিম কুক। তার মতে, ‘ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযান চালানো হলে সত্যাশ্রয়ী বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রতিষ্ঠানই জয়ী হবে।’ কুক-এর কথায় হয়তো যুক্তি আছে তবে এ ধরনের সরকারি অভিযানের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ভুয়া খবর প্রতিরোধ করতে যেয়ে মত প্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন খর্ব না হয়। গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হলে গণতন্ত্র ব্যহত হবে।
ভুয়া খবর মোকাবিলায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
টিম বার্নার্স-লি ভুয়া খবর প্রতিরোধের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। ওয়েবের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক খোলা চিঠিতে তিনি এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্লগ, টুইট, ছবি, ভিডিও প্রকাশ এবং ওয়েবপেইজ তৈরির মাধ্যমে যারা ইন্টারনেটকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করেছেন তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি।
ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস। তিনি ভুয়া খবর ঠেকাতে ‘উইকিট্রিবিউন’ নামে অনলাইনভিত্তিক নতুন এক সংবাদমাধ্যম চালুর কথা জানিয়েছেন। এই সংবাদমাধ্যম পরিচালিত হবে পেশাদার সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের সমন্বয়ে। প্রমাণনির্ভর সাংবাদিকতা করাই তাদের লক্ষ্য। উইকিট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘সংবাদ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, আর আমরাই এটি ঠিক করতে পারব।’
ফেসবুক সম্প্রতি ভুয়া খবর ছড়ানো রোধ করতে নতুন প্রযুক্তি হাতে নিয়েছে। এখন থেকে কোনো ইউজার কোনো খবর ভুয়া মনে হলে তিনি সেটি ফেসবুকে রিপোর্ট করতে পারবেন। এরপর ফেসবুক সেই খবরের যথার্থতা ‘থার্ড পার্টি’র মাধ্যমে যাচাই করে দেখবে। যাচাইয়ের পর যদি খবরটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয় তাহলে ফেসবুকে লিংকটির সঙ্গে ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হবে। ফেসবুকের পাশাপাশি ইন্টারনেটে ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানো রোধে উদ্যোগ নিয়েছে গুগল। ভুয়া নিউজ সাইটগুলো যেন ভুল তথ্য দিয়ে অর্থ আয়ের সুযোগ না পায় সেজন্য বিজ্ঞাপনগ্রহিতাদের কন্টেন্ট মূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে ফেসবুক বা গুগলের উদ্যোগ ভুয়া খবর কতটা প্রতিরোধ করতে পারবে সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ভুয়া খবর রোধে করণীয়
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার, অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল, সাম্প্রদায়িক স্বার্থ হাসিল প্রভৃতি হীন লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ভুয়া খবরের বিস্তৃতি ঘটছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভুয়া খবর কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়। ভুয়া খবর প্রতিরোধ করতে হলে এর স্বরূপ উন্মোচন করা জরুরি। স্বরূপ উন্মোচনের কাজটি করবে কে বা কারা? অনেকেই চান না, সরকার এই কাজ করুক। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ইউজারদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। কোন অনলাইন পেইজ থেকে ভুয়া খবর ছড়ানো হয় সেটা তাদেরকে বুঝতে হবে। ভুয়া খবর ছড়ানো পেইজগুলো এড়িয়ে চলতে হবে বা তাদের নিউজ যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। অনলাইন ইউজাররা সচেতন হলে ভুয়া খবরের উদগাতারা সুবিধা করতে পারবে না। তথ্য-প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, যেসব অনলাইন পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়ায় সেগুলো চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়। এ কাজে তাদেরকে সহায়তা করতে পারে ইউজারবান্ধব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে অন্তত এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতেকরে ভুয়া খবরের পরিমাণ কমে আসে। গণমাধ্যমের পাঠকদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়- পাঠককে সচেতন হতে হবে। পাঠক ভুয়া খবর প্রত্যাখান করলে হলুদ সাংবাদিকতা হালে পানি পাবে না।
যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানুষকে ভুয়া সংবাদ সম্পর্কে সজাগ করার লক্ষ্যে ‘সাইকোলজিক্যাল ভ্যাকসিনের’ কথা বলছেন। তারা মনে করছেন এই ধরনের ভ্যাকসিন ভুয়া খবর সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করবে। তবে এমন ভ্যাকসিন কবে তৈরি করা সম্ভব হবে সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি গবেষকরা।
ভুয়া খবর রোধে ভূমিকা রাখেতে পারেন পেশাদার সাংবাদিকদরাও। কোনো খবর জানলেই সেটাকে টিভি বা অনলাইন মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচারের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে পেশাদার সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে তথাকথিত হট নিউজটি যাচাই করে দেখা। যদি দেখা যায় যে তথাকথিত হট নিউজটি আসলে মিথ্যা তখন সেই সাংবাদিকের কর্তব্য হচ্ছে, যারা ভুয়া খবরটি ছড়িয়েছে বা প্রচার করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। পেশাদার সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা কমতে পারে। পেশাদার সাংবাদিকদের ওয়াচডগের ভূমিকা এবং সচেতন পাঠকের বিচার-বিবেচনাই হয়ে উঠতে পারে ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে কার্যকর সেইফগার্ড।
লেখক: সাকী আহ্সান, সহকারী সম্পাদক, দৈনিক সংবাদ