মোস্তাকিম স্বাধীন বাংলাদেশে দুই দশক ধরে গণমাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের প্রভাব যতটা বদলে দেওয়ার কথা ছিল, তা পুরোপুরি বদলায়নি। গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন সম্প্রচার মাধ্যমগুলোয় তৈরি হয়েছে অস্থিরতা; সমস্যার অন্তরালে সমাধানের অনেক দিকও উঠে এসেছে। কিন্তু দর্শক, সম্প্রচারকর্মী, সাংবাদিক সংশ্লিষ্টদের মনে জেগেছে বিস্তর প্রশ্ন। স্যাটেলাইট চ্যানেল বৃদ্ধি বাংলাদেশে দুই দশক আগে এবং বর্তমানে চলমান স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে সম্প্রচারিত স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংখ্যা ৪৪টি। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে প্রায় ৩-৪টি চ্যানেল। এসব চ্যানেলের মৌলিক চরিত্র হচ্ছে, অধিকাংশ চ্যানেলই সংবাদ ও বিনোদনধর্মী। সব চ্যানেলের একই ধারাবাহিকতায় দর্শক যে যার পছন্দমতো অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন। কিন্তু সম্প্রচারের বিষয়ভিত্তিক গভীরতা কতটা দর্শককে টানছে? শুধুই বিনোদন চাই, দেশের মানুষ কি শুধুই তথ্য চায়? গণমাধ্যমগুলো সেই আলোকে দর্শকের দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে। প্রশ্ন আসতে পারে- দর্শকের চাহিদা পূরণ করতে গণমাধ্যম বিশেষ করে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর দায়বদ্ধতা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং সর্বোপরি সম্প্রচার মানের উন্নয়ন হচ্ছে কি না? এত সম্প্রচারমাধ্যম, তবুও সংশ্লিষ্টদের ভেতরে অস্থিরতা কেন? পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গণমাধ্যমের দিকে দর্শকরা ঝুঁকছে। দেশি চ্যানেলের মালিক, ক্যাবল অপারেটর কর্তৃপক্ষ- সবাই এখন খোঁজার চেষ্টা করছেন কী কারণে চ্যানেলগুলো ব্যবসা সফল হয়ে উঠছে না। তবে এ মাধ্যমটি এখন শিল্পের মর্যাদা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘একসময় সাংবাদিকতার দীক্ষায় যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছেন তাদের কর্মক্ষেত্রে গিয়ে মালিক, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিজেদের পেশাগত অবস্থান পুরো ধরে রাখতে পারছেন না। মালিক বা কর্তৃপক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করতে গিয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’ অন্যদিকে টেলিভিশন চ্যানেলের মান নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। দেখতে দেখতে দুই দশক অতিক্রান্ত স্যাটেলাইট চ্যানেলের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু এসব চ্যানেলে কারা কাজ করছেন, কারা পরিচালনা করছেন, কী ধরনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার হচ্ছে? অনুষ্ঠানের গভীরতা কতটুকু এবং দর্শক, দেশ ও অর্থনীতির কতটুকু উপকারে আসছে? পেশাদারিত্ব কি পুরোপুরি বজায় থাকছে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তরে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনো বাংলাদেশ কেবল কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনে পা দেওয়া সম্প্রচার সময় অতিক্রান্ত করছে। একেকটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের এ পরিপূর্ণতা আনতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞারা ভাবছেন, সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছেন, বাজার সফল করতে মালিক, কর্তৃপক্ষ একত্রিত হচ্ছেন। বাস্তবে কী ঘটছে, দেখা গেছে- এই প্রক্রিয়াধীন পরিস্থিতিতে টেলিভিশন বা বেতার যারা বেসরকারিভাবে সম্প্রচারে আছে, সেখানে পেশাগত জীবনের নিরাপত্তা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। বিশেষায়িত চ্যানেল ইতোমধ্যে সম্প্রচারিত স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর মধ্যে বিশেষায়িত হিসেবে ধরা হচ্ছে- শিশুতোষ অনুষ্ঠাননির্ভর ‘দুরন্ত’ এবং সংগীতবিষয়ক ‘গান বাংলা’ চ্যানেল দুটিকে। পৃথিবীর বহু দেশে শুধু নয়, পাশ্বর্বর্তী ভারতেই এমন শতাধিক চ্যানেলের উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। তাই চ্যানেল কর্তৃপক্ষের উচিত যারা সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান, তথ্য প্রচার করতে চান, তাদের শুধু বিষয়ভিত্তিক প্রচার করা। এতে দর্শক চাহিদা বাড়বে, মালিক কর্তৃপক্ষ বা ক্যাবল অপারেটররা ব্যবসায়িকভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিশেষায়িত চ্যানেল হিসেবে হতে পারে খেলাধুলা, পর্যটন, সংগীত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুতোষ অনুষ্ঠান, কৃষিবিষয়ক, পরিবেশ, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনবিষয়ক, আইনবিষয়ক জনদুর্ভোগ, ঐতিহ্য, ধর্মীয় আবার কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইতিহাসনির্ভর অনুষ্ঠান। বিনোদনধর্মী বহু ধরনের বিষয় নিয়ে চ্যানেলগুলো ভাবতে পারে। হয়তো ভাবছেন; কিন্তু বিশেষায়িত মেজাজ তৈরি হয়নি। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, প্রযুক্তিগত উন্নয়নে টিভি চ্যানেল: দক্ষ জনবল, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বালাদেশ এখন স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার সুবিধাও ভোগ করতে শুরু করেছে। উন্নয়নমুখী জীবনযাত্রায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সবখানে যেখানে প্রযুক্তির ছোঁয়া। এত কিছুর পরও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে অস্থিরতা কমেনি। কথায় কথায় ছাঁটাই হচ্ছেন শত শত দক্ষ কর্মী। এসব গণমাধ্যমকর্মীর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ছাঁটাই হলে তাদের অনিশ্চিত জীবনের জন্য বা তাদের পরিবারের অবস্থা কোথায় দাঁড়িয়েছে, তা ভাবনার বিষয়। তারা কী কী সীমাবদ্ধতায় আছেন, তারও একটা সমাধান করা উচিত। এমন অভিমত শীর্ষ কয়েকটি সাটেলাইট চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। আর ছাঁটাইকৃত গণমাধ্যমকর্মীদেরও একই প্রশ্ন। সম্প্রচার মান নিয়ে প্রশ্ন প্রতিদিন কোটি কোটি দর্শক টেলিভিশনের সংবাদ দেখেন। যারা সংবাদ উপস্থাপন করছেন, তাদের তথ্য পরিবেশনের ভাষা, উচ্চারণ বিশেষ করে সরাসরি সম্প্রচারকালে যে ধরনের তথ্য পরিবেশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, তার মান নিয়ে কে প্রশ্ন করবে? একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু কতটুকু দর্শকপ্রিয় এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করছে, তা কে দেখবে? যেসব সংবাদভিত্তিক অধিকার আদায়কারী সংগঠন রয়েছে, তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। যদিও চ্যানেলগুলোর নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কর্মী নিয়োগ, বেতনভাতা সুবিধা এবং ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করে থাকেন। কথা প্রসঙ্গে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের দায়িত্বশীল একজন সংবাদ ব্যক্তিত্ব বলেছিলেন, একসময় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বেতার ও সংবাদপত্র সেবার মনোভাব নিয়ে সেবা ও বিনোদন এবং মানুষকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সেবা দিত। এখন মালিক কর্তৃপক্ষের বহু দরকষাকষিতে সৃজনশীলতা কমে গেছে। এমন বহু টেলিভিশনে এখন অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল পদে অপরিণত মানুষ যারা হয়তো বা রাজনৈতিক প্রভাবে অথবা মালিকদের স্বার্থ বজায় রাখতে কাজ করছেন। ফলে পেশাগত দক্ষ ও অভিজ্ঞদের স্থান এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব মানুষকে সঠিক তথ্য বিশ^াসযোগ্য সংবাদ হিসেবে তুলে ধরা। বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মীর পেশাগত অধিকার আদায়ে বেশকিছু সংগঠন রয়েছে। এগুলো একেকটি পেশার স্বার্থ নিয়েই তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সরকারিভাবেও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের একাধিক সংস্থা রয়েছে; কিন্তু সবশেষ প্রতিফলন বা অর্জনের জায়গাটি কি বিস্তৃত হয়েছে? এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একটি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার করার আগে এর অবকাঠামোগত দিক নিজস্ব কি না, কোথায় করবেন, কতজন পরিশীলিত ব্যবস্থাপনা, আর্থিক বা সক্ষমতা আছে কি না- সব দিক বিবেচনা করেই তবে সম্প্রচারে আসা উচিত। তা না হলে একেকজন মানুষ ২০ থেকে ২৫ বছর কাজ করার পর হঠাৎ তাদের বাদ দিলে এই দক্ষ মানুষের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চিন্তাভাবনাও তৈরি হচ্ছে। এজন্য সরকারের এ বিষয়গুলো দেখার জন্য একটি কমিশন তৈরি হচ্ছে। এজন্য টেলিভিশনগুলোর মালিকদের আরেকটু আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। চ্যালেঞ্জ স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল: ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া বনাম নিউ মিডিয়া স্যাটেলাইট চ্যানেল থাকলেও ফেসবুকের উদ্ভাবন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিজগতের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আরও রয়েছে টুইটার, ইউটিউব, স্কাইপে, ভাইবার, গুগল প্লাস, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় মাধ্যম। যাদের বলা হচ্ছে নিউ মিডিয়া। নিউ মিডিয়ার আবির্ভাব এবং সময়ের বিবর্তনে ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার ওপর মানুষের নির্ভরতা কমেছে। সংবাদ প্রকাশ ও জানার জন্য তারা এখন বেছে নিচ্ছে নিউ মিডিয়া। অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমসহ নিউ মিডিয়াগুলো তাই ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। নিউ মিডিয়ার আবির্ভাবে অনেকে ফেসবুক এবং টুইটার থেকেই সংবাদ গ্রহণ করছে? কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এসব সংবাদ-ছবি তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই ছাড়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য কিংবা নির্ভরযোগ্য? সংবাদ পড়া বা দেখার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক। বিশ্বে অন্তত ৬০ শতাংশ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পড়া বা দেখা হয়। বাংলাদেশে ৬ কোটি ৩০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ২ কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট ২০১৫ সালে এ তথ্য দেয়। অন্যদিকে অনলাইন সাংবাদিকতার সম্প্রসারণ এবং নাগরিক ও মোবাইল জার্নালিজমের বিকাশ তথ্যপ্রযুক্তি গণমাধ্যমকে গণতান্ত্রিক করে তুলেছে। নাগরিক সাংবাদিকতার নামে এখন তথ্য বা কনটেন্ট টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিওচিত্র ইনফোগ্রাফ আদানপ্রদানে এসেছে মুঠোফোন সাংবাদিকতা। স্মার্টফোন বা ট্যাবলয়েড পিসির মতো ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে প্রচার করা হচ্ছে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোয়। তাই দ্রুত ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার জায়গা দখল করে নিচ্ছে ঠিকই; কিন্তু এ অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ও পেশাগতভাবে পরিচালনা করা এবং টিকে থাকার ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। ফলে উন্নত বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট (ইউজিসি) সাইট খুলেছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের তথ্য, সংবাদ অডিও-ভিডিও এসে জমা হয়। এসব সোশ্যাল মিডিয়া এডিটরের নেতৃত্বে রয়েছে ডেডিকেটেড উইং। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) সোশ্যাল মিডিয়া এডিটরের নেতৃত্বে ২৩ জনের আলাদা উইং এবং সিএনএন’র আই রিপোর্ট উইং রয়েছে। কী ধরনের অনুষ্ঠান স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচার করছে? দর্শকদের প্রথম চাহিদায় থাকে সংবাদ। সংবাদের আদ্যোপান্ত তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া বিষয় এবং বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য। সংবাদের পাশাপাশি অধিকাংশ টেলিভিশনের একটি অংশজুড়ে থাকে আলোচনা বা টকশোভিত্তিক অনুষ্ঠান। এরপর থাকছে বিনোদনধর্মী নাটক, গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, রান্না অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কেরাত প্রতিযোগিতা, নৃত্যানুষ্ঠান, স্বাস্থ্য, আইন ও খেলাধুলার তথ্য। এসব তথ্য ও বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন অনুষঙ্গ সংশ্লিষ্ট। সম্প্রচার করছে শিক্ষা, শিশুতোষ অনুষ্ঠান, বিতর্ক, প্রামাণ্য, বিদেশি ভাষার বাংলায় ডাবিংকৃত সিরিয়াল, চলচ্চিত্র, রাজনীতি ও তৃণমূলের ঐতিহ্য, ইতিহাস আমাদের প্রাণের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা। এসবই গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে- সম্প্রচার হলেই কি দর্শক তাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করতে পারছেন? এখানেও মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মানসম্পন্ন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতার প্রশ্নে এসব সোশ্যাল মিডিয়া কি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে? এখনো আমরা সেই পর্যায়ে যেতে পারিনি। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের এখন সময় এসেছে বিশেষায়িত টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা করা। সম্ভাবনার সম্প্রচার কমিশন ইতোমধ্যে ২০১৪ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত হয়েছে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা। এতে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে সম্প্রচারমাধ্যম বিশেষ করে বেতার ও টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী গণমাধ্যম। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বিশ্বে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারিত সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুষ্ঠানমালা এখন বাংলাদেশেও প্রচারিত হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের সম্প্রচার মাধ্যমগুলো নিজস্ব প্রযোজনার বাইরেও বেসরকারি ও সৃজনশীল ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এতে সম্প্রচারমাধ্যমগুলোয় প্রযোজিত ও বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত অনুষ্ঠানের মাঝে সৃজনশীল ও নান্দনিক অনুষ্ঠানের সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে সব নাগরিকের চিন্তা-চেতনা ও বিবেক, বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল সম্প্রচার মাধ্যমকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থায় এনে এ সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।’ ষষ্ঠ অধ্যায়ে রয়েছে আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠিত হবে। এ কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। এ কমিশনে একজন চেয়ারম্যান এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক সদস্য থাকবেন। সবশেষে বলা হয়েছে, সম্প্রচার কমিশন সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা এবং নীতিমালা প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমানে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটি যাতে তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হয়। একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও জবাবদিহিতার আওতায় এনে সংবাদপত্রের ওয়েজবোর্ডের আলোকেই জাতীয় সম্প্রচার কমিশনে সংবাদকর্মীদের পেশাগত পদবি, বেতনভাতা এবং শৃঙ্খলিত ব্যবস্থাপনা আমাদের সম্প্রচার ব্যবস্থাপনায় আনবে অভিনব পরিবর্তন। লেখক: গণমাধ্যম গবেষক, সিনিয়র টেলিভিশন বার্তা প্রযোজক, এটিএন বাংলা